শেরপুর জেলার ঝিনাইগাতি উপজেলার অধিকাংশ লোক কৃষি ফসল উৎপাদনের সাথে যুক্ত। আয়ের প্রধান উৎস হলো ধান, পাট, গম, ভুট্টা, সরিষা ও নানা জাতের শাকসবজি। তবে প্রধান ফসল হিসাবে কৃষকরা ধান উৎপাদনের উপর নির্ভরশীল। উৎপাদিত ধান নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে বারতি ধান বাজারে বিক্রি করে থাকে।
জানা যায়, শেরপুর জেলার ৫ টি উপজেলাতেই প্রচুর পরিমানে ধান উৎপাদন হয়ে থাকে। এছাড়াও অত্র এলকার উৎপাদিত ধানের চাল মান সম্মত হওয়ায় দেশে এই জেলার চালের ব্যাপক চাহিদা। কিন্তু কৃষকের উৎপাদিত ফসলের মূল্য ও বাজারে বিক্রয় মূল্য হিসাব করলে কৃষক ও প্রান্তিক চাষিরা লাভের পরিবর্তে লোকসানে আছে।
কারণ বাজারে প্রতি মন ধানের মূল্য ৯০০ থেকে ৯৫০ টাকা বিক্রি করতে হচ্ছে। তাও আবার ৪০ কেজির স্থলে ৪২/৪৩ কেজিতে এক মন হিসেবে বিক্রি করতে হয়।
উল্লেখ্য চলতি বোর মৌসুমে কৃষকের প্রতি একর জমিতে ফসল উৎপাদন করতে ৫০ হাজার থেকে ৫৫ হাজার টাকা ব্যয় হয়েছে। প্রতি একর জমিতে ধান উৎপাদন হয়েছে ৫৫/৬০ মন। তাতে কৃষকের উৎপাদিত ধানের মূল্য সমান বা কিছু কম। সরকার ধান ক্রয়ের মূল্য নির্ধারণ করেছে প্রতি মণ ১২শ' টাকা।
কিন্তু অত্র উপজেলায় সরকারিভাবে ধান ক্রয়ের বরাদ্দ ১৩৫০ টন। প্রতিজন কৃষকের বরাদ্দ ৩ টন করে সরকারি গুদামে ধান দিতে পারবে। এতে অত্র উপজেলা ৭টি ইউনিয়নে মাত্র ৪৫০ জন কৃষক এই সুবিধা পেয়েছে। সিংহভাগ কৃষক ওই সরকারি গুদামে ধান বিক্রির সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়েছে।
অত্র উপজেলার প্রায় ১৯ হাজার ৬৩৬ জন পরিবার ধান উৎপাদনের সাথে সরাসরি যুক্ত। শ্রেণিভুক্ত প্রান্তিক চাষি ৭০৩ জন, ক্ষুদ্র কৃষক ২ হাজার ৮৫১ জন, মাঝারি চাষি ৬ হাজার ৮৫৩ জন, বড় চাষি ৬ হাজার ৬০২ জন, ১২০০ লোক রয়েছে বর্গা চাষী। আংশিকভাবে যুক্ত রয়েছে প্রায় ৩ হাজার ৫০০ পরিবারের লোক।
কৃষকদের কাছ থেকে জানা যায় সরকারি গুদামে লটারির মাধ্যমে ধান নেয়ায় অধিকাংশ কৃষক বিরম্বনায় পরেছে। যদি কৃষকদের কৃষি কার্ডের মাধ্যমে ১ জন কৃষককে ৩ টন ধানের পরিবর্তে ১/২ টন ধানের পরিমান করে দেয়া হতো তাহলে আরো অনেক কৃষক লোকসানের হাত থেকে বেঁচে যেতো। কৃষকদের দাবি সরকারিভাবে আরো বরাদ্দ বৃদ্ধি করা এবং সহজভাবে গুদামে ধান বিক্রির পথ উন্মুক্ত করা।
ঝিনাইগাতী উপজেলার ৭টি ইউনিয়নে প্রতিবছর বোরো উৎপাদন হয় ১৪ হাজার হেক্টরের ঊর্ধ্বে এবং আমন উৎপাদন হয় ১৭ হাজার হেক্টরের মতো। তাই এলাকার কৃষক ও প্রান্তিক চাষীদের দাবি যাতে সরকারি গুদামে প্রতি মণ সরকারি মূল্যে সহজে বিক্রি করতে পারে সে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি কামনা করছে এলাকার দরিদ্র কৃষকরা।
টিএইচ